সর্বজনীন পেনশন স্কিমে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। স্কিম চালুর প্রথম তিনদিনেই প্রায় ৪০ হাজার আবেদনকারী অনলাইনের মাধ্যমে নিবন্ধন করেছেন। তাদের মধ্যে প্রায় সাড়ে চার হাজার আবেদনকারী চাঁদা পরিশোধ করে আবেদনের পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন। প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা ব্যক্তিদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দুই কোটি টাকারও বেশি। উদ্বোধনের পর প্রথমদিনই অনলাইনের মাধ্যমে প্রায় আট হাজার আবেদনকারী সর্বজনীন পেনশনের জন্য নিবন্ধন করেন। তাদের মধ্যে এক হাজার ৭০০ জন চাঁদা পরিশোধ করে পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন।
পেনশন স্কিম উদ্বোধনের পরের দুদিন গত শুক্র ও শনিবার ছিল সরকারি ছুটির দিন। এ দুদিনে আরও ৩০ হাজারের বেশি মানুষ অনলাইনে নিবন্ধন করেছেন। তাদের মধ্যে দুই হাজার ৫০০ জনের বেশি চাঁদা পরিশোধ করে পুরো আবেদন প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করেছেন।
জানা যায়, সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালুর প্রথম তিনদিনে নিবন্ধন করেছেন ৩৯ হাজার ৯৫৭ জন। তাদের মধ্যে চাঁদা পরিশোধ করেছেন চার হাজার ৩৯০ জন। পুরো আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা ব্যক্তিদের পরিশোধিত মোট চাঁদার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দুই কোটি ১৫ লাখ ৫৯ হাজার টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালুর পর ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। প্রথম তিনদিনেই প্রায় ৪০ হাজার আবেদন পড়েছে। সহসাই মানুষের এত সাড়া পাওয়া যাবে তা অভাবনীয়।
দেশের প্রায় ১০ কোটি মানুষকে পেনশন সুবিধার আওতায় আনার লক্ষ্যে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করা হয়েছে উল্লেখ করে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, বাংলাদেশের বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি। দেশের মোট জনসংখ্যার ৬২ শতাংশ কর্মক্ষম। গড় আয়ু এবং একক পরিবারের সংখ্যা বৃদ্ধিজনিত কারণে ভবিষ্যতে নির্ভরশীলতার হার বাড়তে পারে। এ কারণে একটি টেকসই সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামো গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এ লক্ষ্যেই সরকার সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালুর উদ্যোগ নেয়।
সর্বজনীন পেনশন স্কিমে মোট ছয়টি স্কিম থাকবে। প্রাথমিক পর্যায়ে প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ‘প্রবাস’, ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী/প্রতিষ্ঠানের জন্য ‘প্রগতি’, স্বকর্মে নিয়োজিত নাগরিকদের জন্য ‘সুরক্ষা’ এবং দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য অংশ প্রদায়ক ‘সমতা’ স্কিম এ চার ধরনের স্কিম চালু করা হয়েছে।
সর্বজনীন পেনশন স্কিমে ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী একজন সুবিধাভোগী ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত এবং ৫০ বছরের বেশি বয়সী একজন সুবিধাভোগী ন্যূনতম ১০ বছর চাঁদা দেওয়া সাপেক্ষে আজীবন পেনশন সুবিধা ভোগ করবেন। পেনশনে থাকাকালীন ৭৫ বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার আগে সুবিধাভোগী ব্যক্তি মারা গেলে পেনশনারের নমিনি ৭৫ বছর পূর্ণ হওয়ার অবশিষ্ট সময় পর্যন্ত পেনশন পাবেন।
চাঁদাদাতা কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দেওয়ার আগে মারা গেলে জমা করা অর্থ মুনাফাসহ নমিনিকে ফেরত দেওয়া হবে। চাঁদাদাতার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শুধু জমানো অর্থের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ঋণ হিসেবে উত্তোলন করতে পারবেন। পেনশনের জন্য নির্ধারিত চাঁদা বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য করে কর রেয়াত পাওয়ার যোগ্য হবেন এবং মাসিক পেনশন বাবদ প্রাপ্ত অর্থ আয়কর মুক্ত থাকবে।
সর্বজনীন পেনশন স্কিমের জন্য একটি ওয়েবসাইট চালু করা হয়েছে। আগ্রহীরা www.upension.gov.bd -এ ওয়েবসাইটে গিয়ে নিবন্ধন করতে পারবেন। ওয়েবসাইটে ঢুকে ‘পেনশনার রেজিস্ট্রেশন’ অপশনে ক্লিক করতে হবে।